ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ , ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ হয়েছে-আলী রীয়াজ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন রাস্তায় অভিনেতাকে সিদ্দিককে গণপিটুনি কারিগরি শিক্ষার্থীরা যা শিখছেন, চাকরির বাজারে তার চাহিদা নেই -সিপিডি আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে : সিইসি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে গড়িমসি অপকর্ম বন্ধ করুন, নইলে বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে -নেতাকর্মীদের ফখরুল সভ্য হতে হলে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান বইপ্রেমী এক ডিসির গল্প গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই বোন ই-৮ ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলেন ২৫ কর্মী পুলিশের জন্য ১৭২ কোটি টাকায় কেনা হবে ২০০ জিপ সামাজিক সুরক্ষায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার উপকারভোগী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে লিপ্ত থাকার অভিযোগ গ্যাস খাতে বছরে আর্থিক ক্ষতি বিলিয়ন ডলার নতুন লুকে নজর কাড়লেন ব্লেক লাইভলি

দুর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু, সুজানা কাব্যের আসলে কী হয়েছিল?

  • আপলোড সময় : ১৯-১২-২০২৪ ১১:৩৯:০৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-১২-২০২৪ ১১:৩৯:০৬ অপরাহ্ন
দুর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু, সুজানা কাব্যের আসলে কী হয়েছিল?
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
টিউশনির উদ্দেশ্যে বের হওয়া মেয়েকে এগিয়ে দিয়ে আসেন মা। কে জানত এটাই শেষ দেখা..। বাসায় ফিরতে দেরি দেখে সন্ধ্যার পর থেকে মোবাইল ফোনে কল দিতে থাকেন মা চম্পা বেগম। রাত ৯টায় মেয়ের ফোনে ঢোকে শেষ কল, এরপর থেকে বন্ধ। মেয়ে সুজানা আর ফেরেননি।
১৬ ডিসেম্বর রাত থেকে শুরু হওয়া সুজানার মায়ের অপেক্ষার অবসান হয় পরদিন ১৭ ডিসেম্বর। এদিন সকালে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে লেকের পানিতে ভেসে ওঠে কলেজছাত্রী সুজানার লাশ। কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডের বউরারটেক এলাকায় পূর্বাচল উপ-শহরের ২নং সেক্টরের ৪নং সেতুর নিচে তার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ সেটি উদ্ধার করে। সঙ্গে পাওয়া যায় একটি হেলমেট। যার সূত্র ধরে মেলে সুজানার সঙ্গেই লেকের পানিতে প্রাণ যাওয়া এক তরুণের। নাম তার কাব্য।
বাবা হারা সুজানা তার মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাজধানীর কাফরুল থানার কচুক্ষেত এলাকায় থাকতেন। ভাষানটেক সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের জাল বুনেছিলেন মা। মায়ের সব স্বপ্ন এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল।
চার বছর আগে সুজানার বাবা মারা যান। বড় ভাই মেহেদী হাসান আহসানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে চাকরি খুঁজছেন। বাবাহীন সুজানা নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেন টিউশনি করে। একই সঙ্গে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ মাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল সুজানার। ছোটবেলা থেকে সাইকেল চালাতে পছন্দ করতেন। মোটরসাইকেল চালানোরও শখ ছিল তার। প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে ঘুরতে বের হতেন। তবে, বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় কাব্যের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হওয়ার কথা জানত না সুজানার পরিবার।
বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে কথা হয় সুজানার মা চম্পা বেগম ও ভাই মেহেদী হাসানের সাথে।
সুজানার মা বলেন, আমি তো মনে করছি আমার মেয়ে হারাইয়া গেছে পাইতাসি না। আর ওই ছেলেও (কাব্য) হারাইয়া গেছে হুনছি। তাইলে মনে হয় আমার মেয়েরে থানায় নিয়া আসছে, তাই থানায় যাই। থানায় তারা নিজেরা কথা বলাবলি করতাসিলো- মেয়েডা তো মারা গেছে। আমি শুইন্নালাইসি গো.... আমি তো শুইন্না পাগলের মতো কানসি।
আমি তার বিচার চাই! আমার স্বামী মারা গেছে। আমার স্বামীর অনেক আদরের মেয়ে ছিল সুজানা। আমি আর আমার মেয়ে বান্ধীর মতো ছিলাম। আমার মেয়েরে মাইরা ফালাইছে, আমি সঠিক বিচার চাই- বলেন চম্পা বেগম।
সুজানার ভাই মেহেদী হাসান বলেন, সুজানা আর কাব্যের মৃত্যুটা পূর্ব শত্রুতার জেরে হয়েছে কি না তদন্ত করা দরকার। কাব্যের শত্রু অথবা আমার বোনের কোনো শত্রু এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এছাড়া হয়তো অন্য কোনো বন্ধু ওদের একসঙ্গে পেয়ে সন্দেহবশত ওদের মেরে ফেলতে পারে। এখন আমরা চাই প্রশাসন সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। আমরা সুজানা হত্যার বিচার চাচ্ছি। প্রশাসন যেন এগিয়ে আসে। ফরেনসিক বিভাগ, সিআইডি এটার যেন সুষ্ঠু একটা তদন্ত করে। এই স্বাধীন বাংলাদেশে খুন, গুম, হত্যা এগুলো আমরা এখন আর চাই না।
এদিকে, সুজানার মোবাইলের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, সুজানা ও তার বন্ধু সাইনুর রশীদ কাব্য (১৬) ১৬ ডিসেম্বর মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হয়ে নিখোঁজ হন। সুজানার মরদেহ উদ্ধারের পর ১৮ ডিসেম্বর বুধবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা পূর্বাচলের লেকে তল্লাশি শুরু করেন। উদ্ধার হয় কাব্য ও তার নীল রঙের মোটরসাইকেল। কাব্য আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
কাব্যের মা সোনিয়া রশিদ বলেন, কাব্য প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হতো। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়ও মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয় সে। রাত ৯টার দিকে সর্বশেষ তার সঙ্গে কথা হয়। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। সেদিন রাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি কাব্যের। এজন্য রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি আমরা।
তিনি জানান, কাব্যের ফুফাতো ভাই আর সুজানা সহপাঠী। একই কোচিংয়ে যাতায়াতের সুবাদে সুজানার সঙ্গে কাব্যের পরিচয় হয়। মাসখানেক হয়েছে তাদের বন্ধুত্ব। সুজানা একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসেছে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর যে তারা দুজন একত্রে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছে তা জানতাম না। ওই রাতে কাব্য বাসায় না ফেরায় সুজানার আরেক বন্ধুকে কল করেছিলাম, কিন্তু সেও তখন কিছু জানত না।
ছেলের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মানতে নারাজ কাব্যের মা সোনিয়া। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের বলছে, ওদের মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এই মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আমার দাবি থাকবে, পুলিশ যেন তদন্ত করে। আসলেই দুর্ঘটনা হয়েছে নাকি অন্যকিছু?
এদিকে পুলিশের ধারণা, দ্রুত গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লেকে পড়ে মৃত্যু হয় দুজনের। এরপরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবে পুলিশ।
নায়ারণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-গ) মেহেদী ইসলাম বলেন, নিহত দুজনের কারও কাছ থেকেই কিছু খোয়া যায়নি। দেখে দুর্ঘটনাই মনে হচ্ছে। এরপরও তদন্ত অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহের কাজ করছে পুলিশ।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দুই পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ দুটি যার যার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ